Ticker

6/recent/ticker-posts

নতুন শিক্ষাক্রম নিয়ে অপপ্রচারের ব্যাখ্যা অভিভাবকদের জানাতে হবে শিক্ষকদের

 


যেকোনো পরিবর্তনই মেনে নিতে, খাপ খাইয়ে নিতে কষ্ট হয়। আর রূপান্তরকে মেনে নেয়া আরো কষ্টকর।

 চলতি বছর থেকে বাস্তবায়ন শুরু হওয়া নতুন শিক্ষাক্রম নিয়ে অপপ্রচার চলছে। নতুন শিক্ষাক্রম নিয়ে কিছু বিভ্রান্তিকর তথ্য ছড়িয়ে সে বিষয়ে কেউ কেউ মিথ্যাচার করছে বলে অভিযোগ শিক্ষা প্রশাসনের। ওইসব বিভ্রান্তিকর তথ্যের সঠিক ব্যাখ্যাও দিয়েছেন শিক্ষামন্ত্রী দীপু মনি। মন্ত্রী দেয়া সেই ব্যাখ্যা অভিভাবকদের জানাতে হবে শিক্ষকদের। নতুন শিক্ষাক্রম নিয়ে অপপ্রচারের ব্যাখ্যা লিখিত আকারে শিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলোতে পাঠিয়ে তা অভিভাবকদের মাঝে প্রচার করতে অধ্যক্ষ প্রধান শিক্ষকদের বলেছে মাধ্যমিক উচ্চ শিক্ষা অধিদপ্তর। 

মঙ্গলবার অধিদপ্তর থেকে ওই লিখিত ব্যাখ্যা মাঠপর্যায়ের শিক্ষা কর্মকর্তা প্রতিষ্ঠান প্রধানদের পাঠিয়েছে অধিদপ্তর। লিখিত ব্যাখ্যা স্কুলগুলোতে পাঠাতে শিক্ষা কর্মকর্তাদের ব্যাখ্যাটি অভিভাবকদের মাঝে প্রচার করতে প্রতিষ্ঠান প্রধানদের বলেছে অধিদপ্তর।  

 

 

লিখিত ব্যাখ্যায় মাধ্যমিক উচ্চ শিক্ষা অধিদপ্তর জানিয়েছে,

 নতুন শিক্ষাক্রমে পড়াশোনা নেই, পরীক্ষা নেই, শিক্ষার্থীরা কিছু শিখছে না বলে বিভ্রান্তি ছড়ানো হচ্ছে।

তবে সঠিক ব্যাখ্যা হচ্ছে, শিক্ষার্থীরা আগের চেয়ে অনেক বেশি পড়বে, নিজেরা সক্রিয়ভাবে পড়বে, শিখবে। দলগত কাজ করে আবার তা মূল্যায়ন হবে প্রতিটি কাজের। আবার ষন্মাসিক মূল্যায়ন বার্ষিক মূল্যয়নও হবে। কাজের পরীক্ষা ঠিকই থাকছে, কিন্তু পরীক্ষার ভীতি থাকছে না। পরীক্ষা উত্তীর্ণ হওয়া এবং না হওয়া আছে। শুধু তাই নয়, সাতটি স্কেলে শিক্ষার্থীদের রিপোর্ট কার্ডও হবে। 

আগে নবম দশম শ্রেণিতে মোট ৪০০ নম্বরের বিজ্ঞান থাকলেও নতুন শিক্ষাক্রমে তা কমিয়ে ১০০ নম্বরের করা হয়েছে বলে বিভ্রান্তি ছড়ানো হচ্ছে।

সঠিক ব্যাখ্যা হচ্ছে, নতুন শিক্ষাক্রমে কোনো বিষয়ে নির্দিষ্ট নম্বর বরাদ্দ নেই। আছে শিক্ষার্থীরা পাদর্শিতার পর্যায়। কাজেই বক্তব্যের কোনো ভিত্তি নেই।

নতুন শিক্ষাক্রমের বিজ্ঞানের বিষয় কমিয়ে দেয়া হয়েছে বলে অপপ্রচার চলছে।

তবে, সঠিক তথ্য হলো নতুন শিক্ষাক্রমে ষষ্ঠ থেকে দশম শ্রেণি পর্যন্ত সব শ্রেণিতে বিজ্ঞান বিষয়ের জন্য অপেক্ষাকৃত বেশি সময় রাখা হয়েছে। সার্বিক দিক দিয়ে আগের চেয়ে বিজ্ঞানের গুরুত্ব বেড়েছে, বিষয়বস্তুর পরিধিও বেড়েছে। 

বিভ্রান্তি ছড়িয়ে বলা হচ্ছে, ব্রিটেনের কারিকুলামে নবম শ্রেণিতে বিষয় বাছাইয়ের সুযোগ আছে, কিন্তু নতুন শিক্ষাক্রমে বাংলা মাধ্যমে তা রাখা হয়নি।

তবে সঠিক ব্যাখ্যা হচ্ছ, প্রচলিত ইংরেজি মাধ্যমের শিক্ষাক্র ইংল্যান্ডের জাতীয় শিক্ষাক্রম এক না। ইংল্যান্ডসহ পৃথিবীর বেশিরভাগ দেশের শিক্ষাক্রমেই নবম দশম শেণি পর্যন্ত বিষয় নির্বাচনের সুযোগ থাকে না।

অধিদপ্তর আরো জানায়, অপপ্রচারকারীরা বলছেন,

 বিজ্ঞান শিক্ষাকে খাটো করতে বিভাগ বিভাগজন তুলে দেয়া হয়েছে।

তবে সঠিক ব্যাখ্যাটি হলো, নবম শ্রেণিতে পৃথিবীর প্রায় কোনো দেশেই বিভাগ বিভাজন করা হয় না। দশম বা একাদশ শ্রেণিতে হিয়ে সাধারণত বিষয় নির্বাচনের স্বাধীনতা দেয়া হয়। 

 

 

উপকরণ কিনতে হয় তাই শিক্ষা ব্যয় বেড়েছে বলে দাবি করা হচ্ছে জানিয়ে অধিদপ্তর বলছে,

সঠিক ব্যাখ্যাটি হচ্ছে, উপকরণের দাম বা চাকচিক্য বা সৌন্দর্য বিবেচ্য না। স্থানীয় সহজলভ্য পুনঃব্যবহার যোগ্য কাগজ বা উপকরণ ব্যবহারের নির্দেশনা বারবার দেয়া হচ্ছে। ফলে ব্যয় বাড়ার কোনো কারণ নেই। আর নতুন শিক্ষাক্রমে কোচিং বা নোট বইয়ের খরচতো লাগছেই না। 

গ্রামের দরিদ্র জনগোষ্টি উপকরণ কিনতে পারছে না বলে বৈষম্য বাড়ছে দাবি করে বিভ্রান্তি ছড়ানো হচ্ছে।

সঠিক ব্যাখ্যা দিয়ে অধিদপ্তর বলছে, সহজলভ্যতা নিশ্চিত করেই উপকরণ, শিখন-শেখানো পদ্ধতি নির্বাচন করা হয়েছে। প্রতিটি ক্ষেত্রেই বিকল্প উপায় রাখা হয়েছে। ফলে বৈষম্য তো নয়ই বরং গ্রামের স্কুলগুলো ভালো করছে। কোচিং গাইড বইয়ের খরচ লাগছে না। ফলে বৈষম্য কমেছে। অস্বচ্ছল পরিবার থেকে উঠে আসা শিক্ষার্থীরা নতুন শিক্ষাক্রমে ভালো করছে। 

অধিদপ্তর বলছে, তার বলছে বাসায় গিয়ে দলগত কাজ করতে হয়, যা বাস্তাবে সম্ভব নয়, ফলে ডিভাইস নির্ভরতা বেড়েছে।

 এটি ঠিক নয়। সঠিক তথ্য হলো সব দলগত কাজ বিদ্যালয়ে করার নির্দেশনা দেয়া হয়েছে। বাড়িতে কোনো দলগত কাজ দেয়া হয় না। 

শিক্ষকরা বাসা থেকে রান্না করা খাবার নিয়ে আসতে বলেন বলে অপপ্রচার ছড়ানো হচ্ছে জানিয়ে অধিদপ্তর বলে,

 বাড়ি থেকে রান্না করা খাবার আনার নির্দেশনা নেই। জীবন দক্ষতার অংশ হিসেবে শুধুমাত্র একটি অভিজ্ঞতা নির্দিষ্ট ক্লাসে রান্না আছে। 

শিক্ষার্থীরা না লেখায় বানান ব্যকরণ শিখছে না দাবি করে বিভ্রান্তি ছড়ানো হচ্ছে।

 সঠিক ব্যাখ্যা হচ্ছে, যেকোনো সময়ের চেয়ে শিক্ষার্থীদের নতুন শিক্ষাক্রমে বেশি লিখতে হচ্ছে। কারণ প্রতিটি বিষয়ের প্রতিটি অভিজ্ঞতায় শিক্ষার্থীদের বিভিন্নভাবে প্রায়োগিক লেখার সুযোগ রাখা হয়েছে। ফলে শুধু বানান বা ব্যকরণ না, শিক্ষার্থীরা স্বতঃস্ফুর্তভাবে নিজেদের প্রয়োজনে লিখতে পারছে। 

গণিত অনুশীলনের সুযোগ নেই দাবি করে বিভ্রান্ত ছাড়ানো হচ্ছে জানিয়ে অধিদপ্তর বলছে, প্রতিটি গণিতের ধারণা এখন প্রায়োগিক ক্ষেত্রে বাস্তব পরীক্ষা ব্যাপক অনুশীলনের মাধ্যমে শিক্ষার্থীরা করছে। 

ধর্ম শিক্ষায় লিখিত পরীক্ষা রাখা হয়নি বলে মিথ্যাচার করা হচ্ছে জানিয়ে অধিদপ্তর বলছে, সব বিষয়ের জন্য একই পদ্ধতিতে মূল্যায়ন ব্যবস্থা রয়েছে, যেখানে লিখিত মূল্যায়নও অর্ন্তভুক্ত আছে।

শিক্ষাকে দক্ষতাভিত্তিক করতে গিয়ে বুদ্ধিবৃত্তিক শিক্ষার সুযোগ কমে গিয়েছে দাবি করে মিথ্যাচার করা হচ্ছে জানিয়ে অধিদপ্তর বলছে

, বুদ্ধিবৃত্তিক শিক্ষার ভিত্তি হচ্ছে জেনে, বুঝে, উপলব্ধি অনুবাধন করে তা প্রয়োগ করার মাধ্যমে সমস্যা সমাধানের চেষ্টায় নতুন ধারণা অনুসন্ধান করা। মুখস্তনির্ভরতা বুদ্ধিবৃত্তিক বিকাশ ঘটায় না। 

অনেকে বিভ্রান্তি ছড়িয়ে বলছেন, তাদের সন্তানরা বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি পরীক্ষা দিতে পারবেনা।

 অধিদপ্তর বলছে, সঠিক ব্যাখ্যা হচ্ছে শিক্ষাক্রমের শিক্ষার্থীরা যখন উচ্চমাধ্যমিক পাস করবে। তখন বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে ভর্তি প্রক্রিয়াতেও পরিবর্তন হবে। সেসব কার্যক্রম ইতোমধ্যে শুরু হয়েছে। 

চাকরির  ক্ষেত্রে নতুন শিক্ষাক্রমের ফল কাজে আসবে না বলে অভিভাবকদের বিভ্রান্ত করা হচ্ছে

জানিয়ে অধিদপ্তর জানিয়েছে, চাকরি ক্ষেত্রেও পারদর্শিতার মূল্যায়নের ভিত্তিতে নিয়োগ হবে। সেসব কার্যক্রম ইতোমধ্যে শুরু হয়েছে।

গতকাল সোমবার রাজধানীর আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা ইনস্টিটিউটে (আমাই) আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে নতুন শিক্ষাক্রমের বিভ্রান্তি নিয়ে ব্যাখ্যাগুলোই দিয়েছিলেন শিক্ষামন্ত্রী দীপু মনি। 

লিখিত ব্যাখ্যায় অধিদপ্তর আরো জানিয়েছে, যেকোনো পরিবর্তনই মেনে নিতে, খাপ খাইয়ে নিতে কষ্ট হয়। আর রূপান্তরকে মেনে নেয়া আরো কষ্টকর। কিন্তু বুঝতে হবে- এই রূপান্তর এগিয়ে যাবার জন্য অবশ্যম্ভাবী, এর কোনো বিকল্প নেই।

একমাত্র বিকল্প হলো পিছিয়ে পড়া, নতুন প্রজন্মের জীবনকে ব্যর্থ করে দেয়া। যা আমরা কিছুতেই হতে দিতে পারি না। অভিভাবকরা সন্তানের শারীরিক মানসিক স্বাস্থ্যের কথা ভাবুন। তাদের দক্ষ, যোগ্য মানুষ হবার কথা ভাবুন। তাদের যেকোনো পরিস্থিতিতে নিজেদেরকে খাপ খাইয়ে নিয়ে উৎকর্ষ লাভের কথা ভাবুন। একবার ভীষণ প্রতিযোগিতার চিন্তা থেকে বেরিয়ে সহযোগিতার, সহমর্মিতার চর্চার মধ্য দিয়ে সন্তানের ভালো মানুষ হওয়ার কথা ভাবুন। শিক্ষকদেরও দক্ষতা বাড়ানোর জন্য প্রশিক্ষণ চলছে। তাঁদেরও জীবনমান উন্নয়নে সরকার আরও পদক্ষেপ নেবে। কারণ এরও কোনো বিকল্প নেই।

 কাজেই নতুন শিক্ষাক্রমকে স্বাগত জানান। নতুন প্রজন্মের জন্য সম্ভাবনার সকল দ্বার উন্মুক্ত করে দিন। স্মার্ট বাংলাদেশের স্মার্ট নাগরিক তৈরিতে নতুন শিক্ষাক্রম বাস্তবায়নে আপনার সমর্থনের মাধ্যমে আপনিও শরিক হোন।

অভিভাবকদের উদ্দেশে অধিদপ্তর বলছে, অপপ্রচারে বিভ্রান্ত না হয়ে নিজে যাচাই করুন, সঠিক তথ্য জানার চেষ্টা করুন। স্বার্থান্বেষী কোনো মহলের ফাঁদে পা দেবেন না।

 

 

Post a Comment

0 Comments